কাঁকড়া
কাঁকড়া
১
আঙুলের সচকিত প্রতিন্যাসে ছিপি খুলে গেলে তরলে আলোড়ন হয়। আঙুল ও নখ ভুলে তখন চোখের মৎসদার্ঢ্যে আঙুল-ছোঁয়া শুকনো চুল আছড়ে প'ড়ে তাকায় — একবার ঘুড়ির দিকে‚ একবার মাকড়সার।
নেশা ক'রলে ও চুল ছেঁড়ে। অথচ নেশা ক'রতে ও যে চায় এমন নয়। বরং পাহাড়ের বিশেষ জায়গা থেকে ঝুঁকে তালে দেখা যায় মাছগুলোর খলবল — অগমেন্টেড(augmented) জটিল-তলে জলীয় বাষ্পানাগোনা।
ঘুম থেকে উঠে দেখলে কিছু স্তনদন্তের মত দেখা যায় :- আস'লে কুকুরদাঁত — দাঁতের বেড়ায় ঘেরা বিড়ালটা লামামুখ নিয়ে ঝাপসা অন্ধকারে প্রতিকূল হাওয়ায় দাঁড়িয়ে আছে। ওর লেজরোমে মধ্যমা রাখতে ও বিপদজ্জনক (কার কাছে (?) বোঝা গেলো না।)-তাকালো। রোমগুলো সব ঝ'রে গেলো। ও অনামিকাটা বাড়িয়ে দিলো। পুনর্ঠাহরে যেন অঞ্চল ভিজে যায় ……….।
কী ব'লছিস? ‘কাঁটা’? না….আ‚ আমি নিজেই কাঁটা হয়ে আছি!
ভিতরে আলোল বাইরে উদাসীন ও জানলার রডে গাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক রড নয়‚ জানলাটা পুরোটাই কাচের। বদ্ধ সেটা ছোটো ছোটো বর্গতলে খুলে (ঠিক খুলে নয়‚ স্বতন্ত্র হয়ে) নিজেদের ভরকেন্দ্রের মধ্য দিয়ে যাওয়া অনুভূমিকীকে ঘূর্ণাক্ষে পরিণত ক'রে কখনো নিজেদের তল কোণে আবার কখনও তলগুলোর প্রান্তরেখা পারস্পরিক নৈকতলীয়ভাবে ঘোরে (এরকম কাচের পিছনে পারদের পাতলা আস্তরণ না দিলে মানায় না।)। শোনা যায়‚ কেউ জলকে ঘুম পাড়াচ্ছে। চটপট ডিমসিদ্ধটা…..নাহ্‚ ডিমভাজার আওয়াজটা যেন একঘেয়ে। এই আওয়াজটা নিয়েই একটা জিপগাড়ি দূরে হারিয়ে গেলো। ‘ফট’— এই আওয়াজটাকে সড়'কে প'ড়ে থাকা বায়ুবদ্ধক একটা পলিথিনের চাকার চাপে ফেটে ওঠা ব্যতীত অন্য কোনোভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারত না যদি না ও নিজের গলার লকেটটাকে তালুতে রেখে বামহাতের ক'ড়ে-আঙুলের নখ দিয়ে একটুখানি মোম খুঁটে সেখানে ঝুঁকে প'ড়ে শুঁকত।
নির্জন্নিবাক চলচ্চিত্রাভিক্ষেপটার অন্য মাত্রা আছে‚ অন্তত ওর মনে। ‘ও’-মানে 'শিস'। স্যাঙাতরা ‘ফ়িশ’(fish)-ব'লেও ডাকে। একটা লাফের আওয়াজ শোনা গেলো যেন। টেবিলের ওপর কাদার ছাপ।
দেখবো?
তাড়াতাড়ি গিয়ে একটু খুঁটে দেখলো‚ কাদাটা পুরোনো‚ জং-ধরা। আমি ভাবলাম‚ মায়ের নেনাদুটো কী সুন্দর! কাতলার মুড়োর মত‚ যেন খেতে আসে। আমার যদি থাকত!.....।
একটা-কিছু মরবে ঐ-বাসায়। কী?‚ তা তার অজানা। কিন্তু মরবে‚ মরবেই। শৌচাগারের লাল মগটা চিত(্)-হ'য়ে-আছে। আ…চ্…ছা…আ…আ‚ শিস কি পড়বে না!? ঐ-যে চলেছে লেংচে লেংচে — দু-তিনটে ধাপ টপকে নামতে হয়‚ বর্তমানের অধিকাংশ ইচ্ছাধীন না হ'লেও!
প্লে…হ!
কী হ'লো….ও…ও! স়িস়্?
গাঞ্গি‚ গাংগি‚ ঝিলমিল-ঘরে যাবার আগে এত দেরি ক'রে আসতে হয়!?
২
‘ছ্যাঁক’।
তুই‚ এই(!)‚ এদিকটা দেখ। অ্যাপ্রনটা ভালো নয়‚ ঘাম মোছা যায় না।
হেই‚ তুই চুলটা কোত্থেকে কাটালি? ভালো তো! 😮! 😍!
আরে! পরে হবে। তুই ওদিকটা দেখ‚ পুড়ে গেলো!
নানানানা নানানা‚ বলবলবলবলবল:- এখনই বল:-‚ কোথা থেকে?
আরে!‚ প্রসাধনী সালঁতে গিয়ে বলেছি কেটে দিতে‚ দিয়েছে। ! তুই যাহ্! আঁক্!
ইর্র্ক! নাঞ‚ আল্প্……….!
থাস ক'রে তুলসীটবটা মাটিতে প'ড়ে ভেঙে গেলো। চমকে ওঠবার আগেই হুহু ক'রে দাবাড়ুরা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়শিছাদে মুড়লো। আকর্ষী নিচু হ'য়ে দেখলো:- শুঁড়‚ গুড় নয়‚ শুঁড়। আরশোলার মতো পিঁপড়ারও কি অ্যান্টেনা থাকে? দূরত্ব ক’মলে শুঁড় ঘন হ'য়ে সুড়সুড়ি দিয়ে ব'ললো‚ “পিম্প্লিং”। বাবা পিঁপড়াভাষা বুঝত‚ শুধু পিঁপড়াদের নয়‚ সবার — জাদুবুড়ির কাছে হাত পেতে থাকলে জিনগুলো হাত চেটে দেয়(্), দিলে-পরে নখ-দিয়ে … সে(ঃ) অনেক হ্যাপা — তার-চেয়ে শুধু তাকিয়ে থাকলে অথবা চোখ বুঁজে থাকলে জানা যায়„ ওরা বলে, “ক্রিমলীন ক্রিমলীন, ঘিনঘিন ঘিনঘিন”„ প্রতিধ্বনি হয়, “হিমলীন হিমলীন”।
৩
অনেককিছুই ওর অজানা। কেনো যে বাবা ওকে মেয়েদের পোশাক পরিয়ে রাখে! মুড়ির ভিতরের মতো রাতে কয়েকটা ঝাউ দুলছে — বাইরে বায়ুপ্রবাহ, ভিতরে বায়ুস্রোত — ছেঁড়াছেঁড়া ছায়া — ছেঁড়া ছায়ায় শিস গিয়ে দাঁড়ায়। তার দাঁড়ানোয় পূ্র্ণচাঁদের কায়া গোলাপি ছায়া নিয়ে পাহাড়ের ওপর ছাইলো। ও পাকদণ্ডী বেয়ে উঠতে থাকলো। খাদের দিকে তাকালে ভয় করে, ঠিক যেন তেলেভাজার কড়াই। ভয়ে ও দেওয়াল ঘেঁষে হাঁটতে থাকে। দেওয়ালের ফাটল বেয়ে একটা গভীর সাপ হিসহিসিয়ে বলে, “বৃত্তেরা ঠিক বৃত্ত নয়।”।
৪
ওঘরের জানালা সব খুলে রাখো, ক্ষতি নেই। কিন্তু মাঝের পর্দাটা দিয়ে রাখো, না-হ'লে এঘরে বসা যাচ্ছে না।
ও! তোমার ক্ষতিই শুধু ক্ষতি, আর আমারটা কিছু নয়! চমৎকার!
তোমার যা ক্ষতি, তা যখন তোমার ক্ষতি নয়, তখন তা আমার ক্ষতি কিনা সে'প্রশ্ন অবান্তর।
হুঁ।
কী “হুঁ”?
বুঝলাম।
কী?
তোর বাসায় তোর কোনও পাশবালিশ আছে?
আছে তো। আর আছে তুলোয় ঘেরা নিশি। ‘আছে’-নয়, ছিলো। জানিস?„ যখন ছোটো ছিলাম, ঠিক এ[ই]রকম ক'রে ঘুমোতাম, পা-দুটো ঠেকে যেত মশারিতে, মা পিঠে পাউডার মাখিয়ে দিত। (একটু থেমে ও আবেগময়তা বর্জন ক'রে) স়িস় কেমন যেন পালটে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে এমনভাবে বেণি বাঁধে যেন লক্ষ্মীর বোন, আবার হঠাৎই চুল ছিঁড়ে খেতে শুরু করে। ওর আগের প্রিয়তম স্যাঙাতদের সঙ্গেও তো আর মেশে না দেখি। কেমন খারাপ ব্যবহার করে সবার সঙ্গে। ওর এই বিপ্রতীপতার কারন কী?, জানো? ওর নেশাংশীদারদের অন্যতম তো তুমি।
অসতীদের সতীপনার ধরনই এমন।
তুমি কোন বইয়ের পাতা শুনি?, গাছের পাতাকে দোষ দাও!? পাতাও নয়, ফলক সার! কিন্তু ঘরের কোণে এত পোকা কেন?
শুধু কি কোণে? গোটা ছাদেই তো!
ইশ! কী বিশ্রী!, নোংরা!
ঠিক যেন তারামণ্ডলের আকাশ! দেখেছিস!?
বর্ষায় হয় জানি। তা-ব'লে এই শীতকালে!?
আমাদের তো সম্বচ্ছর শীতঘুম। ওদেরও কি থাকবে নাকি!? পোকা হ'লো বিবিদের খোকার মতো। আসা_যাওয়া জরায়ুও টের পায় না।
টের পাবে না কেন? কাঁকড়ার তো দুটো দাঁড়া : একটা ভিতরের, একটা বাইরের। নড়াচড়া না ক'রলেও পোকাগুলো জড়িয়ে যাবে তাতে।
দাঁড়া ভাঙতে পারিস না?
দাঁড়া ভাঙলে দাঁড়কাকটা যাবে কোথায়?, বল:-? এই পোকাগুলোর মতো কোণটায় প'ড়ে থাকতে হবে। কোনওদিন হয়তো দেখবি সীমান্তে দাঁড়িয়ে লুব্ধক হ'য়ে জ্বলছে।
“এই পৃথিবীতে ওর চোখদুটো কতটুকু বাড়তে পেরেছে?”:- প্রশ্নটা শুনে প্রথমে ও আর ফ়্যানানির করঞ্জাক্ষিদ্বয় ঘুলঘুলি দিয়ে আগত আলোকরশ্মিগুলোর বাঁকাপথ রুদ্ধ ক'রে দেখল: একটা ইজের ও দুটো ধুলোরঙের পাথর, সেগুলোকে ধ'রে রাখা থলি → মুখগহ্বরভর্তি থুতুর মধ্যে জিভমূল পশ্চাত্তালুতে সদার্ঢ্যে ছুঁইয়ে চাপা গর্জনময় কম্পমান বায়ুর ত্বরান্বিত ভঙ্গিতে রগুড়ে_সেয়ানা প্রকৃত্যন্বিত হাসি হেসে পাথরদুটো পরস্পরের সঙ্গে ঠুকতে_ঠুকতে চ'লে গেলো ক্যাঙারুটা।
কী হ'ল?
আরে ও যে আমাদের পোড়ো বাসাটার কথা ব'লে গেলো!
আমাদের আবার পোড়া বাসা কোত্থেকে এলো!? বাসাই নেই, তার আবার পোড়ো!
আহা! বাড়ি নেই ব'লে কি আর পোড়ো বাড়ি থাকতে নেই! (একটু থেমে) আমার থেকে থেকে বড্ড হাঁফ ধরে, যেতে পারি না,বোধহয় হৃদয়ে ফুটোটুটো-কিছু আছে।
কই? কোনখানে? দেখি:-?
খুব শখ যে! ফুটো দেখলেই ঢোকাতে ইচ্ছা করে বুঝি (রগুড়ে গলায়)!
আঙুল রাখলে ফুটো বুঁজে যাবে, তা-ই কি চাস না তুই?
চাঁদের একপিঠের নরম ধীর আলোর ’পরে আচমকা কড়িমধ্যমরূপ ভাঙা হাওয়া গাদ পিছলে গালের আপেলের ওপর পড়লে অনেকক্ষণ পরে ফ়্যানানি ক্লান্তিস্ফূরিত ঠোঁটদুটো খুলে বলল, “ওখানে রেখাসমূহ রয়েছে, নিবি?”
আমি কী করব? রং বা ছুরি কিছুই যে নেই!
(একটা কাঁচি হাতে নিয়ে) আমি কিন্তু অনেককিছু করতে পারি, জানিস?
যেমন?
আমি তোর লিঙ্গটা কেটে ফুটো বানিয়ে দিতে পারি।
তাতে লাভ?
তোতে ফুটোর কমতি আছে। তাই নবগর্ভে আমার ভাবীচিন্তার ন্যায্যতা প্রতিপাদন সম্ভবপর হতে চলেছে কিছুটা:: তুই নস, তোর দেহ আর ত্যানা জড়াজড়ি করে প্রাচীন জ্যামিতিকে আঁকড়ে ধরছে — সেই তন্ত্রের মধ্য দিয়ে কিছু পাখি চালিয়ে দেব — নখসমূহে নকশার নির্ভরবিন্দুগুলো বেঁধা থাকবে।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় তোকে মমি করে রেখে দিই। (একটুখানি থেমে) আচ্ছা, ধর যদি এমনই হ’ত, সময়কে মমি ক’রেই যদি রাখা যেত… আঃ হাঃ হাঃ হাঃ…।
এই(থুড়ি)… না, হাঃ, শোন না তুই…।
কী যে বলিস না তুই…!
ওফ়্! হাঃ…।
ওদের কাছ থেকে সর্বদা আলো এদিকেসেদিকে যায় না, এখন যেমন: শুকনো পাতা মাড়ানোর শব্দের সমানুপাতে দূরত্ব বাড়তেই থাকল। ক্রমশ দণ্ডায়মান পরিধির একবিন্দুতে সূর্য থাকলে সূর্যটিকে পিছনে রেখে ভূসংলগ্ন বিন্দু থেকে পরিধি বরাবর সম্মুখ থেকে ঊর্ধ্বপশ্চাদ্দিকে গোল তাম্রথালার দিকে আকস্মিক তাকিয়ে দৃষ্টিগত্যনুসারিতায় তাকে দেখা গেল:: চোখ থেকে তামাটে ছায়া যায় না — ছায়াটা ক্রমশ একটা আংটির মত দেখাল — আংটিফ়্রেমে দেখা গেল একটা চাহনি, পোড়ো বাড়িটার ফটক ধ’রে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
ওদিকে কী দেখছিস?
আরে! সেই যে মেয়েটা, দাঁড়িয়ে আছে।
কীসের মেয়ে?
একজন পুরুষমানুষের।
আচমকা শিস পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকে মেঝেতে রাখা নিটোল একটা ঘনকের ওপর ডান পা রেখে দুদিক থেকে সেটির দিকে হেলে পড়া লতা গুলোকে দুই হাতের তালুর উলটোপিঠ দ্বারা সরিয়ে ফ়্যানানির দিকে তাকাল। ফ়্যানানি তার দিকে তাকাতে বলল„ “আমি দাবার ছকের কালো ঘরগুলোকে একদিকে সাদা ঘরগুলোকে আরেকদিকে রাখবো‚ তারপর সেই সাদাকালোর সীমানায় ছেতরে ব’সে বিড়ির ধোঁয়া ছাড়ব।”
“ধোঁয়া যদি সাদাকালোর হিসাব গুলিয়ে দেয়!?”
→ বক্তব্যের মতোই ফ়্যানানির চিন্তিত মুখ দেখে শিস “সাদাকালোর হিসাবটা কি এমনিতেই গোলানো নয়!?”-বিড়বিড় করে লঘুপদে চলে গেল।
সেই যে মেয়েটা
আঁশের মতো পিচ্ছিল
শ্যাওলার মতো জীবন্ত
মমির মতো ধূসর
দেখতে পাচ্ছ না!?
ধ্যাৎ! তুমি বড় কল্পনাপ্রবণ। যা হওয়ার নয় তা ভেবে লাভ কী!?
নয় গো‚ সত্যি‚ জ্যান্ত সাপের মতো সত্যি। (থেমে) কেন? বাস্তববাদী তত্ত্ব তুমি মানো!?
মঞ্চের ওপর একটি কালো টেবিল আঁকা। ফ়্যানানি তমসার মধ্য থেকে উঠে এসে আক্রমণোদ্যত বিড়ালির মতো দুই থাবা টেবিলের ওপর থাবাদুটোর মধ্যে দুফ়ুট দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিধ্বনিহীন আওয়াজ ক’রে বলল‚ “
আঁশের মতো পিচ্ছিল
(স্পষ্ট + প্রতিধ্বনিহীন + তমসায় ভাষাপথ খননি স্ববলে)
শ্যাওলার মতো জীবন্ত
(প্রতিধ্বনিযুক্ত + ঈষৎ গর্জনকৃত + গণনা(উপ১ -ক্ষম কিন্তু অসীম(উপ২ গণনার নিরিখে উপ২)উপ১) চামচিকের ডানার ফড়ফড় শোনা গেল।)
মমির মতো ধূসর
(এসময় তিনজোড়া বিশাল কালো ডানা না ন’ড়ে দ্রুত এসে টেবিলের ঘেরের চকচকেকে ঢেকে মৃদু ও মৃদুতর কথাগুলোর সংসক্তি কমিয়ে দিল‚ ফ়্যানানির নগ্ন দেহটিকে জড়িয়ে উড়িয়ে নিয়ে গেল বুঝি!)
”।
শিশুদের প্রতি অত্যাকর্ষণ আদৌ ভালো জিনিস নয়, ফ়্যানানি। এসো ফ়্যান্স়্, কালচে নীল আসুক, এবং নীল আসুক।
ফ়্যানানি তার অবাক‚ ভাসিয়ে দেওয়া চোখ নিয়ে ওর দিকে তাকাল — একটা প্রবল বেগ এল ওর মধ্যে (রাঁখের শরীরটার ওপর ওর লোভ জন্মে গেছে।) — তড়িৎ-পদসঞ্চালনে ও রাঁখের অন্তর্বাস ফাটিয়ে কিছুএকটা বাইরে আনতে চাইল।) — বেরোলো একটা পাথর‚ আলুর মতো → গোধূলির একাকী রানায় যেমন ফাটলে ফাটলে আদিম ভাষার মতো বিশুদ্ধ রক্তের গুচ্ছঘাস থাকে‚ ঠিক তেমনি রোগা বুক ও নেয়াপাতি ভুঁড়িতে যাযাবর রোম — ফ়্যানানির মনে হ’ল‚‚‚ রোম নয়, লোম! কালো ময়লা কুঁকড়ে যাওয়া আলুর চোখের মতোই বিব্রত‚ ভীত ও মৃত। চোখ নাকি আলুর জীবন(?)‚ তবে?
আমার শরীর মরে গিয়েছে‚ ফ়্যানানি‚ তুমি যাও। (রাঁখ কালো চশমাটা প’রে নিল।)
এই ক’বছরে এত বুড়িয়ে গিয়েছে মানুষটা! কিছুটা ঘৃণায় ও মায়ায় নিজেকে সরিয়ে ও আবার জানলার শিকগুলো ধরে দাঁড়াল। “ওহো! মাংস রক্ত দাঁতগুলিই তো তুলে আনা হয়নি! নিজ বোকামির কথা ভেবে নিজেরই হাসি পেল ফ়্যানানির। ফুসফুস প্রশ্বাসপূর্ণিয়ে মনে হলো হৃদয়ে ফুটো থাকা একদিক থেকে ভালোই।
৫
“আপনার কি আমাকে যথেষ্ট আগ্রহোদ্রেকী ঠেকে না!?”‚ আকর্ষীর প্রশ্নে স্বল্পসময়াবকাশ জুড়ে রাঁখের বাঁভ্রুবামার্ধাংশ তরঙ্গের এক স্থিরালোকচিত্ররূপে স্থিত থেকে(‘হ’তে’-অর্থে। ‘থাকিয়া’-অর্থে নয়।) চকিতে নম্র হ’ল → তনুভূত অধর ক্রমশ কালো কাঠিন্যে ঘনীভূত হ’ল → অর্ধকয়েশেঅর্ধকয়েশে পিষে বেরোনো বায়ুর অভিক্ষেপ এইরকম:-
ব্যাপারটা চাররকম হতে পারে: এক, প্রশ্নের অন্তরালে প্রশ্নটি প্রশ্নকর্তা ও শ্রবণকর্তা উভয়ের কাছেই প্রচ্ছন্ন; দুই‚ সেটি প্রশ্নকর্তার কাছে প্রচ্ছন্ন কিন্তু শ্রবণকর্তার কাছে প্রাঞ্জল; তিন‚ প্রশ্নকর্তার কাছে প্রাঞ্জল কিন্তু শ্রবণকর্তার কাছে প্রচ্ছন্ন; চার‚ উভয়ের কাছেই প্রাঞ্জল। জল চেন? ডুবুরির শরীরকে অতলান্তিক যেভাবে আঁকড়ে ধরে সেই গন্ধ তোমার শরীরে। (উদাসীন ভঙ্গিতে) আমি হারিয়ে যেতে চাই না আকর্ষী। (কণ্ঠস্বর ক্রমশ খাদে নামাতে নামাতে) কিন্তু তোমার জাঙিয়াটা চাই‚ দাও।
আপনার তো মাগ আছে।
রাঁখ তার দ্বিপার্শ্বীয়প্রতিসম নাকের সমছেদসমতলে নাকের উপরে থাকা মধ্যরেখার সঙ্গে ত্রিশডিগ্রী কোণে বাম তর্জনীটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যেতে ভ্রুদ্বয়ের মধ্যাংশের ঠিক নীচের খাঁজে আটকে না থাকতে চাওয়া চশমার মধ্যধারকদণ্ডকে ঠেলে তুলে নিয়ে যথাস্থানে রেখে বলল‚ “বক্রতান কেন?‚ রাবড়ি!? (রহস্যময় ধোঁয়াটে চোখ ক’রে) আস্লে সম্পর্কটা জটিল: ও কাল অধ্যাপিকা হবে‚ আর আমি যেকোনও বিষয়েই কেঁচে গণ্ডুষে প’ড়ে আছি।
৬
ফুটোটির দিকে এতক্ষণে চোখ পড়ল সমাকর্ষীর। টব থেকে দেওয়াল — এক নম্র রেখা: নম্র‚ অথচ রিরংসাণ্বিত। ফুটো দিয়ে আলো আসে না। সে ঝুঁকে পড়ে পিঁপড়াগুলির পিঠে হাত বুলিয়ে বলল আকর্ষীকে‚ “কৃষ্ণগহ্বরে গেলে আর ফিরে আসা যায় না‚ আমি জানি।
আমিও জানি।
(সমস্বরে) আমরা উভয়েই জানি।
তারপর উভয়ে উভয়কে দীর্ঘ নোংরা চুমু খেল। দৃশ্যমানতার নিয়ম মানলে আলো এদ্দিনে তাদের কাছেও আসতে পারত‚ আসে কই? টিকটিকিটা লেজ নাড়ল।
আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো শিস‚ চোখে পাতালের কম্রত্ব — শ্বাপদের খসখস সুরে হারটি ছিঁড়ে ফেলল সে। আমার হার … আমার কান্না পাচ্ছে … আমি…ই … ওকে কত ভালোবাসি‚ তুমি জানো … তাও ও … ওহ্ আমার হারটি ছিঁড়ে …
তোকে কে হারটি পরতে বলেছে?
… দি… বেশ করেছি পরেছি। তোর তাতে কী?
…ল।
ওর চোখের বিভঙ্গ আয়ত হ’ল‚ একদিষ্ট দৃষ্টিমেলনের পাশাপাশি দৃষ্টাক্ষিগোলকে তিরতির কম্পন দেখা দিল। আর ঠিক তখন আমাকে কেউ যেন প্রবলাকর্ষণে পশ্চাদ্গত করতে থাকল→ ওর চোখ আয়ত থেকে গোল হ’য়ে অনুভূমিক পানসি হওয়ার মুখে→ গত্যভিমুখী হিসস্রোতন্যস্ত কাঁচাদেহ কাউকে কিছু না বলে বালি হয়ে গেল।
আমি শিসের কাঁধে মাথা রাখলাম।
এই‚ ওঠ!
ও আমাকে হালকা ক’রে ঠেলে দিল। আমি দৌর্বল্য ও বিষণ্নালস্যাবেশে বললাম‚ “শুই না রে?”।
৭
বাতাসে পিঁপড়াগুলি আসে — আসে টেবিলের ওপরে রাখা নরম রুটির গন্ধে — আমি ছুটে যাই — ওদের টিপে মেরে ফেলব — জাদুবুড়ির মন্ত্রটা আমার মনে আছে এখনও — ও কিন্তু ওপাশ ফেরে — আমি ওর পিছনে গিয়ে পড়ি তৎক্ষণাৎ। ঘুমাচ্ছে। ঘুমাক। ওকে নগ্ন করে দিই।
কনভ়েক্স়্ স়েটের(convex set -এর) এক্স়্ট্রীম্ বিন্দুতে(extreme point -এ) একদিন আকর্ষীকে পাওয়া গেল। শুধু জাঙিয়াটি হারিয়ে গেছে। অসীম-ছিদ্রান্বিত সেটিকে পিঁপড়াগুলি বয়ে নিয়ে চলে। ওদের ক্ষমতা আছে। টবের মাটি খুঁড়ে সেটিকে পুঁতে সমাকর্ষী জল ঢেলে দিল।
স্নানঘরে বাথটাবে শুয়ে শুয়ে শিস ভাবছিল:- “জল মানে লঙ্কা না রসগোল্লা?”। না„ শব্দ দিয়ে শব্দ ভাঙাগড়ার‚ ভাবকে তা(🐣🐥)-দিয়ে শব্দে শব্দে ডিম পাড়ানোর খেলায় নয়‚ রৌদ্রধূলিকণায়। ত্রসরেণুগুলি স্বর্গ থেকে আসে। ছেঁড়া পুঁতিগুলি কি ফিরিয়ে দেবে ওরা? “আঃ!”‚ ইচ্ছা করেই চেঁচাল ও।
কী হ’ল স়িস়ি?
‘গাঙ্গি!’‚ ঝিলিমিলি ঘরে যাওয়ার আগে এত দেরি করে আসতে হয়!?
আমি বললাম, চিম্পি।
লেখক/লেখিকা:
নাম: নির্মাল্য চৌধুরী রুবাই
ফ়েসবুক-প্রোফ়াইল: https://www.facebook.com/nirmalya.choudhury.3591
choudhurynirmalya4@gmail.com
ReplyDelete