শূন্য, যা গণনাঅক্ষম
কিছু শব্দ যা চাবিকাঠির ম’ত কাজ করে: চাবিশব্দ: দেশ(বাংলা), space(ইংরেজি), espace(ফরাসি), স্থান(বাংলা), place (ইংরেজি), endroit(ফরাসি), τόπος(গ্ৰিক) দেশকাল(বাংলা), xронотоп(রুশ), chronotope(ইংরেজি); যেগুলো আপাত-প্রতিশব্দরূপে ব্যবহৃত হলেও গূঢ় তফাত রয়েছে।
শূন্য, যা গণনাঅক্ষম
আমরা কি সংখ্যাকে গুনতে পারি? যখন কোন সংখ্যা বিভিন্ন অনুক্রমের সমসত্ত্ব সারিবাঁধা ক্ষেত্রগুলি গুনতে ব্যবহৃত হয়, যখন কোন অনুক্রম প্রতিমুহূর্তে অন্যান্য অনুক্রমের ক্ষেত্রগুলির ছাপধারিকা হয়„ তখন আমরা পিণ্ডস্বরূপ-কোনওকিছুর ম’ত ভাবের সাংখ্যীয় উপস্থাপনা ব্যবহার করি — আমরা একসেট্ সংখ্যাকে ‘স্বাভাবিক সংখ্যা’ বলেছি, যথাক্রমিক ফলগুলির দ্বারা ‘নিজে অন্য-কিছুর দ্বারা গণনাক্ষম’— এমন ক্রীড়াসমূহ বলবৎ রেখেছি: (সীমানা অস্তিত্বশীল) ←সর্বসম→ (কোনও একের নিজস্বতা) ←সর্বসম→ (একই সঙ্গে অন্তর্জগৎ ও বহির্জগতের অস্তিমানতা)। দুটো ক্ষেত্র রয়েছে যা-তে অন্তর্জগৎ ও বহির্জগৎ ঘেরিত বা আত্মকৃত ও নির্বাসিত হতে পারে না: হয় সীমানাকে এমন একটা অপেক্ষক হতে হবে যা সন্ততভাবে অন্তর্জগৎ ও বহির্জগতের উভয়ের দ্বারা নস্যাৎ হ’য়ে চলেছে, নয় বিষয়ের আত্মসচেতনা প্রকৃতার্থে ভ্রম। প্রত্যেক শব্দ, প্রত্যেক বাক্যাংশ, প্রত্যেক কথনক্রিয়া বা লিখনক্রিয়া, কোনও পাঠ্য বা পাঠ্যরূপ-- কোনও_ব্যক্তি„ যখন অন্য-কারও বোধগম্যতার সমীপবর্তী হয়, অন্তর্জগতে মৌলান্তরিত হয় — মৌলান্তরণ(!) — (কিন্তু কী সেই মৌল?) — এবং অন্তর্জগতে অন্তর্জগতে আলাপচারিতা চলে। সেই অন্তর্জগৎগুলো কোনও সীমানা খুঁজে পায় না, যেন সীমানা ক্রমাগত সেই ঘনীভূত যুদ্ধস্পেস থেকে উভপাক্ষিকভাবে পিছু হটেছে — যে সীমানা ‘নেই’ হতে পারতো তা জন্ম দিচ্ছে এক সমুদ্র নাস্তির — যে সীমানা ‘শূন্য’ হতে পারত তা হ’য়ে উঠছে অসীম প্রস্থের। শুধু যোগাযোগ ঘটার প্রাক্মুহূর্তেই সীমানার অস্তিমানতা প্রতিভাত হওয়া আরম্ভ হয় এবং একইসঙ্গে সীমানার অস্তিশীলতার কারণে যোগাযোগ অসম্ভব হ’য়ে ওঠে! এবং সেই সীমানা এক নয়, দুই নয়„ বরঞ্চ তা (দুই ও তিনের)--, (তিন ও চারের)--, … -- মাঝামাঝি-কোথাও। এই তীব্র যোগাযোগ(অবশ্য যদি এটাকে ‘যোগাযোগ’ বলা যায়) বিস্তৃত কালখণ্ডের আধেয় হ’য়ে ওঠে; উভপক্ষের অতীতকে নিজ গাত্রে খনিত ক’রে ভবিষ্যতের বীজাবলি নিজ গাত্রে রেখাঙ্কিত ক’রে বর্তমানরূপে ক্রিয়াশীল থাকে, (কিন্তু কখন?)
ছড়াতে থাকে, ক্রমাগত ছড়াতে থাকে জ্ঞানীয় ও মুখর কর্তৃত্ববিন্দুগুলো, সর্বব্যাপীরূপে।
শূন্য-সীমানা — যা সর্বদিকে চেয়ে থাকে, ব্যাপ্তির আহিঙ্কেতে - দেশ_কাল_সীমানা ছাড়িয়ে, বিন্দু থেকে অসীমের দিকে। সীমানা তখনই অস্তিমান যখন ‘ভিতর’ ও ‘বাহির’ থাকে। সেই ব্যক্তির কথা ধরা যাক যে শূন্য-সীমানার সান্নিধ্যে এসেছে, ফুলেফেঁপে সীমানা ছাড়িয়ে পূর্বতন গণ্ডি, এক্তিয়ার, নানা দিক থেকে নানা মাত্রায় প্রশস্ত করতে চায়, বর্ধিত করার মাধ্যমে সব-কিছু নিজের মধ্যে ঢুকিয়ে নিতে চায়, এবং অন্যকেও সবকিছু তার নিজের মধ্যে ঢুকিয়ে নিতে বলে, যেন সবকিছু একদিন ফুলতে ফুলতে ফাঁপতে ফাঁপতে ফেটে যাবে, মিলেমিশে একাকার হ’য়ে যাবে।
বিস্তার, হয় কেন্দ্র দাবি করে নতুবা এক স্থানের প্রাক্ধারণা দাবি করে → প্রথমত,, যে_কেন্দ্র আধুনিকতার নয়, যা কোনো অখন্ড মহীয়ানতার দাবি জানাত, ঋতের আশা দেখাত; অন্তিমত, যে_একস্থান কোনও-এক প্রাণের বাস্তুতন্ত্র যা শূন্য-সীমানাতে মাত্র দিগন্তে চেয়ে থাকে। আক্ষরিকার্থেই একধরনের অন্তিমতা কাজ করে — আমরা ভাবতে পারি যোগাযোগের সূচনার কথা যেখানে দেশ ও আপন আপন কুলুঙ্গি-বাস্তুতন্ত্র কথা বলে, ‘আমরা কুলুঙ্গিগুলো পরস্পরের কাছে কোনও-এক শক্তিভঙ্গের জলোচ্ছ্বাস-মুহূর্তে উন্মুক্ত করব’— এমনটাই তো ছিলো উদ্দেশ্য, অথচ বিস্তারের তোড়ে কুলুঙ্গির কথা ম’নেই আসে না — বিষাদ ও দীর্ঘশ্বাসগুলো উবে যায় সীমানাবিহীনতার রম্যচকে — যেখানে যোগাযোগের প্রয়োজন রহিত হয়ে যায়, কারণ অন্তর্জগৎ ও বহির্জগৎ অস্তিত্ব হারায় — হারায়, অথচ শোণিত-খেলা থাকে না, সুন্দর ও পরিপাটি। কিন্তু কোথায় যায় অতীতীয় খনন, রেখাঙ্কন আর স্থান ও কুলুঙ্গি-বাস্তুতন্ত্রের গাঁটছড়া?
এত কাছে ও এত ঘনিষ্ঠ যেন ধরা পড়ে না:- বিষয়ীকে কোনও-কিছু ব্যাখ্যা করতে হ’লে যেটার প্রথমে দরকার হয় তা হ’ল কোনও দেশে একটা অবস্থান নেওয়া — ‘সে-দেশ ’-এর আধেয় হিসেবে সেই ব্যাখ্যাকারী বিষয়ী যে-বিষয়কে সে ব্যাখ্যা করতে চায়, যে-বিষয়ে সে জ্ঞান লাভ করতে চায়, সেই বিষয়কে বাস্তুতন্ত্ররূপে ক্রিয়াশীল করে, আর সেই স্থান ঐ দেশের মধ্যে মূলবিন্দু হ’য়ে সেই বাস্তুতন্ত্রের স্থানাঙ্ক নির্মাণ করে। শূন্য-সীমানাতে আমরা স্থানচ্যুত নই, বরঞ্চ নিজেস্থানে থেকেই আমরা প্রসারিত হ’তে থাকি এত কাছে ও এত ঘনিষ্ঠ যেন ধরা পড়ে না — ধরা পড়ে না, কারণ স্থগন অনুপস্থিত, আছে শুধু প্রসারণ — সেই অপেক্ষা প্রয়োজন যা দেশে বিষয়ী ও তার বিষয়-প্রতিবেশের মাঝের মাধ্যমকে ক্রিয়াশীল করবে — যে-মাধ্যমের কোনও ঠিকানা নেই, সংজ্ঞা নেই, বৈশিষ্ট্য নেই, শুধু অপেক্ষা তাকে ক্রিয়াশীল করবে। শূন্য-সীমানা স্পেসের বিষয়ে চিন্তিত, কিন্তু দেশ-এর বিষয়ে চিন্তিত নয়, স্থানের বিষয়ে চিন্তিত নয়,,, স্পেস: চিত্রণযোগ্য, বিবরণযোগ্য ক্ষেত্র,, স্থান: বাসযোগ্য যা বাস্তুতন্ত্ররূপে কাজ করে।
τόπος
একটি শূন্যস্থানের অপেক্ষা সৃষ্টি হচ্ছিল — বহিঃপ্রবৃষ্ট নয় — এমন একটি তন্ত্র যা প্রবল শক্তির দাবি জানায় না — কী এই তন্ত্র? আমরা কি একে জীবিত বলতে পারি? এমন এক তন্ত্র যা সর্বদা হবু প্রবল শক্তি। যোগাযোগের উপাংশগুলো আঠার সাহায্যে আঠা হয়ে লেগে থাকে। সবকিছু স্থির হতে পারতো যদি তন্ত্রটি জমাট হ’ত — যেন সেখানে বিন্দু সমূহের অতিরিক্ত-কিছু থাকত না। তেমন একটি তন্ত্রে পূর্বোল্লিখিত অপেক্ষা সৃষ্টি হওয়ার আগে গভীরতর কোন অপেক্ষা অপেক্ষা করত — গভীরতর কোন ক্ষেত্রের হদিশ পাওয়া যেতে পারত অপেক্ষা ঘনীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে অপেক্ষাক্ষেত্রের ঘৃণ্যতম দিকটি হ’ল → সেটি ভাসন্ত বাস্তবতার হওয়ার কারণে কোন অপেক্ষা সেখানে অপেক্ষক হয় না, যেখানে ‘অপেক্ষক’কে আমি একটি সতত ক্রিয়াশীল সত্তা হিসেবে গণ্য করব, যদিও আমি এমন এক তন্ত্রের কথা বলতে চলেছি সময় যেখানে সান্দ্র। সীমানা আছে এই ধারণা থেকে তা নেই এই ধারণায় উপনীত হওয়ার মধ্যকার গলন-প্রক্রিয়ায় আমরা দেশ -এর ঘন পরিচয় পেতে চাই। এটা স্থানের প্রত্নপ্রতিমায়ন নয়। কীভাবে একজনকে ‘সম্বোধন’ করা যেতে পারে যদি সে পৃথকভাবে বিবেচ্য না হয়, যদি সে একটি সান্দ্র মাধ্যমের অবিচ্ছেদ্য সান্দ্রলীনতায় সেই মাধ্যমের ‘অপেক্ষা’রূপে অস্তিত্বশীল থাকে? সমুদ্রের অনুপস্থিতিতে কি একটি প্রাণ অস্তিত্বহীন হ’য়ে যেতে পারে? যে-কোনও সমুদ্র নয়,, এমন-একটি যেটি ভরকেন্দ্রবিহীন, অথচ এমন-একটি কেন্দ্রের অপেক্ষা ধারণ করে যেটি সেই সমুদ্রটির জীবেরা ব্যতীত কেউ আত্তীকৃত করতে পারে না, অথচ এমন-একটি কেন্দ্র যেটি সে কখনও ছুঁতে পারে না। উত্তরাধুনিকতা কেন্দ্রকে অস্বীকার করতে চেয়েছে, উপড়ে ফেলতে চেয়েছে,, শূন্য-সীমানা কেন্দ্র নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বাধাবিহীন কেন্দ্রাতিগতার কথা বলেছে; শূন্য-সীমানাতে যা অন্তর্লীন তা বস্তুত স্পেসীয় বাস্তবতা যা একধরনের ভাসমান নেটওয়ার্ক — কেন্দ্র নয়, আমরা অন্য এক নাভিনির্ভর হ’তে চেয়েছি কিন্তু স্পেসের মুখরতায় τόπος হারিয়েছে। যদি প্রচলিত ক্রোনোটোপ(chronotope)-তত্ত্বের কথা ভাবি,, সেখানে কখনও কাল স্থানের দ্বারা আবদ্ধ হয়, কখনও-বা স্থান কালের দ্বারা আবদ্ধ হয় — যেন এক তুলাদণ্ডীয় উপস্থিতি, যেখানে এক ‘দোলন’ টের পাওয়া যায়। দোলন সর্বদা স্থিতির দাবি জানায়: এমন এক স্থিতি, যার ভিত্তিতে ‘দোলন’ প্রতীয়মান হয়। কী এই ‘দোলন’? বিমূর্ত কোনও বাধ্য নড়াচড়ার নামকরণ? নামই বা কোনটি? উক্তিচিহ্ন সমেত শব্দটি, …ব্যতীত…, নাকি এই ‘দোলন’ সেটা যেটাকে আমি ‘অপেক্ষা’ বলতে চাইছি?
বেজন্মা ভুত? — এমন একটা বিন্দুর ‘অপেক্ষা’তে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছি যেন সেই বিন্দুটিকে অস্তিত্বশীল হ’তে আমার অপেক্ষা করতে করতে ভুত হ’য়ে ওঠার অপেক্ষার অপেক্ষা করতে হবে, চারভাঁজি অপেক্ষা!: একমুখী একটা অপেক্ষা, আর বাকি তিনটে অপেক্ষা বিপরীতমুখী। অসমতা। হেলে পড়া তুলাদণ্ড কি ভুতের জন্ম দেয়্? তন্ত্রটি এমন যে সেটার একপ্রান্তে একটি চোঙ অবস্থান করছে যেটি ফাঁপা কিন্তু উভমুখবদ্ধ: প্রান্তবর্তী মুখটায় আমি, আর অগ্রবর্তী মুখে আমার ভুত যার উৎপত্তি বস্তুকে বুঝতে চেয়ে ব্যক্তির বস্তু হ’য়ে ওঠার অপেক্ষা থেকে। সাহিত্যবিশ্ব চিরকাল চিন্তাভাবনার প্রতিবেশ হিসেবে শূন্যতা আহ্বান ক’রে এসেছে — সেই শূন্যতা যা নাভির অপেক্ষা করে যা অস্তিত্বহীন ←→ কীভাবে একটা নাভির ওপর ভরসা করতে পারি আমরা যা খনিত নয়? “But on the basis … behavior of such systems seem to us complex.”(Principal of computational equivalence (টপিক), Stephen Wolfram (লেখক), A new kind of science (বই))। কীভাবে আমাদের সঙ্গে সেই মহাশূন্য(যাকে মানুষ নিজেকে চেনার আবশ্যিক ও যথেষ্ট প্রতিবেশ ঠেরে এসেছে)-এর যোগাযোগ ঘটতে পারে যদি আমরা সমগ্র নির্দেশতন্ত্র থেকে নির্দেশের ধারণা ত্যাগ ক’রে এক দোদুল্যমান নাভির আকাঙ্ক্ষায় সেই ঘনীভূত তন্ত্রকে বুঝতে না পারি যা উভয় সিস্টেমের মধ্যেকার যোগাযোগের নিমিত্ত আবশ্যিক: যা আছে তা আমাদের মাথার বাইরে থাকা ধোঁয়াশা, যাকে আমরা এক সর্বগ্ৰাসী শূন্যতার মাধ্যমে বুঝতে চাইছি, এরূপ ভাবনাচিন্তা আমাদের আত্মসৃষ্ট গোলকধাঁধার বাইরে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে না, কারণ মাধ্যমটাই যোগাযোগের বাধা হিসেবে ক্রিয়াশীল যা যোগাযোগের প্রক্রিয়াকে জটিল ক’রে তুলছে।
টপোস কি কোনও মাত্রা? যদি তাই হয় তা-হ’লে তা কোন ধরনের মাত্রা? ‘মাত্রা’ বলতে গণিতে যা ভাবা হয় তাই, নাকি সাহিত্যের মাত্রা, নাকি বাচনিক মাত্রা? কোন ধরনের মাত্রার কথা বলতে চাইছি? কোন ঘরানার মাত্রা? ধ’রে নেওয়া হচ্ছে যে_বিষয়_প্রদত্ত তাকে ধারণ করছে প্রদত্ত বিষয়ের বাক্যাণুগুলো— পদ, সেগুলোর বিন্যাস ও অপেক্ষা। টপোস যদি মাত্রা হয় তবে কি তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা রয়েছে? বা নতুন চিন্তা-উদ্রেকী ‘কাল’? প্রশ্নটার উত্তর সহজভাবে শুরু করা যেতে পারে: যেহেতু আমরা কোনও-এক দৈর্ঘ্য, কোনও-এক প্রস্থ ও কোনও-এক উচ্চতা মাপতে পারি যে মাপনপ্রক্রিয়া টপোসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় তা-হ’লে টপোসকে মাত্রা হিসেবে ঘোষণা করার সাহসিকতা কোন যুক্তিতে দেখাতে পারি আমরা!? এখন, মাত্রা হিসেবে সময় নিজেই একটা বড় প্রশ্ন। কারণ আমরা যদি তর্কটা এমনভাবে শুরু করি বা এমন একটা বিশেষ পন্থায় শুরু করি যা অধিবিদ্যীয় চিন্তাবোধের বুদ্বুদের পথে না হেঁটে ও যখন একে ‘টপোস’ নাম দিয়ে ‘কাল’কে নিজমধ্যে অন্তর্ভুক্ত ক’রে স্থানের বোধকে বা বাসস্থানের ধারণাকে দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতায় নিঃস্ব ক’রে ফেলে তাকে খুলে ফেলার দাবি জানায় যেন নতুন এই মিশ্রন কুণ্ডলী তখন ক্রোনোটোপ ব্যাটার হ’য়ে ওঠে আর আমরা সেই একই কুয়োয় প’ড়ে যাই যে কুয়োর বিরুদ্ধে আমি টপোসকে খাড়া করতে চাইছি। ক্রোনোটোপের বোধ গতির এক বোধের প্রাক্ধারণা করে যেটার প্রতিতুলনায় এক স্থিতিবোধ সর্বদা সামগঠনিক প্রকৃতিতে অস্তিমান। এটা একধরনের স্পন্দনের প্রাক্ধারণা করে যেটাকে ক্রোনোটোপ নাম দেওয়া হয়েছে। আধুনিকতা সর্বদাই কেন্দ্রনির্ভর বয়ান গড়ে যেখানে উত্তরাধুনিকতা কেন্দ্রের ধারণাকে নস্যাৎ করে। যা কেন্দ্রের ধারণাকে নস্যাৎ করে তা যদৃচ্ছ স্পন্দনের উদ্বেগকে এড়াতে পারে না। কিন্তু যেহেতু আধুনিকতার কেন্দ্রিকতা সেই বিষয়গুলোর অন্যতম যেগুলোর বিরুদ্ধে উত্তরাধুনিকতা তার অস্ত্রশস্ত্র শানিয়েছে, নাগরিকত্বের প্রশ্নে অন্তত এই নিবন্ধে আমি সেই একই প্রাসীয় প্রক্রিয়ায় নিজেকে লিপ্ত করা থেকে রহিত রাখব। মিখাইল বাখতিন তাঁর চিন্তনে কান্টীয় স্পেস ও সময়ের ধারণা কাজে লাগালেও তাঁর উদ্দেশ্য ছিল কান্টীয় “transcendental aesthetics”-এর “transcendental”— এই পরিভাষার ভাসমানতা থেকে তফাতে চিন্তাবিশ্ব গড়া আর তিনি ক্রোনোটোপকে তীব্রভাবে মৌহূর্তিক বাস্তবতা ভাবতে চেয়েছিলেন। যখন কেউ বাস্তবতা শব্দটার উচ্চারণ করে তখন সেই শব্দটির বংশানুচরিত বলে, ‘এটা ইন্দ্রিয়জ ও ইন্দ্রিয়গোচর ধারণা।’। কিন্তু প্রশ্ন হ’ল, ক্রোনটোপকে বাস্তবরূপে অস্তিমান করা কীভাবে সম্ভবপর যখন দূরত্বের কোনো বোধ সেখানে নেই, এবং সমভাবে, সেই যদৃচ্ছতা আমাদের পক্ষে কীভাবে সৃষ্টি করা সম্ভব যেটির দ্বারা আমরা “transcedent”কে অভিজ্ঞতালব্ধ করতে পারব? যদি এই প্রশ্নটা-নির্ভর বৈজ্ঞানিক অধিপ্রমেয়গুলো অর্থাৎ যেমন ‘স্পেস খালিরূপে অস্তিত্বশীল না নয়?’কে আপাতত সরিয়ে রাখি তবে এই ক্ষেত্রে আমরা অন্তত একটা প্রশ্নের হাত এড়াতে পারি না: আমরা স্পেসকে মাধ্যমব্যতীত ভাবছি কেন আর উলটোদিকে কেনই-বা তাকে মাধ্যমব্যতীতরূপে প্রাক্ধারণা ক’রে সমস্যাহীনভাবে এগোতে পারছি না?। অপেক্ষা। মূলবিন্দু ব্যতীত বিমূর্ততা সর্বদাই স্থির, টপোস নিজের অস্তিত্বকে প্রান্তিকতা ব্যতীত প্রণোদিত করতে পারে না।
লেখক/লেখিকা:
নাম: নির্মাল্য চৌধুরী রুবাই
ফ়েসবুক-প্রোফ়াইল: https://www.facebook.com/nirmalya.choudhury.3591
Comments
Post a Comment