ফাঁস, লেজ ও নাগরাজুতোর গল্প
~~~ ফাঁস, লেজ ও নাগরাজুতোর গল্প ~~~
একধরনের চাহিদা টের পান — (কেউ বলে দেয় না) — গাঠনিক তুল্যতা-বিচারের দাবি ওঠে মনে — আপনি নান্দনিক হয়ে ওঠেন; আর, উনি লেজ খসিয়ে, ফাঁসমুক্ত হয়ে, নাগরাজুতো পরে, ঘিঞ্জিভাব ত্যেজে, পরিপাটি নরবানর হন।
এ-কথা বলে বিশেষ-কিছু বলে উঠতে পারা গেল না বটে, সর্বনামের দাবিদারের সঙ্গে আলাপ হয় নি যেহেতু, তবে বলতে যে বল লাগে তা জানি;→ যে-বল লাগবে তা ব্যবহৃত পদ, পদগুচ্ছ, বাক্যাংশ, বাক্য ও অনুচ্ছেদ নিজেরাই নিজেদের মধ্যে যোঝাযুঝি করে রচনা করবে, এবং ঠেলাঠেলিতে অর্বাচীন যে-কাজিয়া-ফ্যাসাদ ঘটবে তাতে সেই পুরাতন তুল্যতায়ই ফিরে যাওয়া যাবে এবং এভাবেই বৃত্তটি পূর্ণ হবে আর কর্তাসত্তা হিসেবে আমিও দায় এড়াতে পারব।
পুরাতন তুল্যতাই যে। আলোচকের কর্তৃত্ব বইই গৌরচন্দ্রিকা বৃত্তান্ত ছুঁয়ে ফেলেছে বলে বর্তমান আত্মন্যুব্জ কাজিয়ার আওতার বাইরে থেকে যাবে ওই তুল্যতা ও নান্দনিকতার প্রবণতা; এভাবে কিছু বাজে ও ঘোরালো কচকচি দিয়ে বর্ণকে বর্তমান দার্ঢ্য যা স্থিতিশীলতার পারা দেখায় তা থেকে মুক্ত করা গেল; এবং তাই গাঠনিকভাবে কাঁচা বর্ণ নিয়ে পেলব ও স্ফূর্তিপূর্ণভাবে কথা বলা চলবে; অতএব ও অতঃপর বৃত্তান্ত ছেড়ে অন্য এক বৃত্তয় গিয়ে পৌঁছনো সহজ হবে, অলুক দ্বন্দ্বসমাসের টিপ্পনী-আহত হয়ে:—
টিপ্পনী ১: বাচিক: বানান করতে দেখা যায় কীভাবে?— {ব-এ আ-কার} {চ-এ হ্রস্ব ই (‘হ্রস্ব ই’-এর ‘হ্রস্বোই্’-ধাঁচের উচ্চারণ নিয়ে আলোচনা থেকে বিরত হলাম)} {ক}। ব্যবহার?: {ব-এ য-ফলা} {ব} {হ-এ আ-কার} {র}। গুম্ফবন্ধনীর ফাঁকে ফাঁকে (একটার শেষ ও আরেকটার শুরুর মাঝখানে) বিরতি। ব্যঞ্জনবর্ণর গায়ে স্বরচিহ্ন ও ফলা। ব্যঞ্জনবর্ণই মুখ্য। ব্যঞ্জনবর্ণ প্রকট, স্বরচিহ্ন প্রচ্ছন্ন; ব্যঞ্জনবর্ণ প্রকট, ফলা প্রচ্ছন্ন। কার ও ফলায় এই। অন্যদিকে, অন্ধত্ব?: {অ} {দন্ত্য ন-এ ধ-এ (‘দন্ত্য ন’-এর ‘দোন্ত্যন্ন’-ধাঁচের আলোচনা থেকে বিরত হলাম)} {ত-এ ব-এ}। যেন অলুক দ্বন্দ্বসমাস, ন্- ও ধ-এর, আবার ত্- ও ব-এর! কোনও ব্যঞ্জনবর্ণর প্রাধান্য অন্যটা খর্ব করতে পারছে না, উভয়েই প্রকট। উল্লেখ্য, এখানে সমাসের দুটোই যে পদ থাকবে তা নয়কো— যেমন, ‘দ্বন্দ্ব‘— দিব্যি তো দন্ত্য ন-এ দ-এ ব-এ করা হয়, পূর্বপদ, অন্তঃপদ ও উত্তরপদ।
১ম টিপ্পনীর অনুসিদ্ধান্ত: প্রকট ও অলুক দ্বন্দ্বসমাসের ব্যঞ্জনবর্ণর গ্রথন ওটার ল্যাংবোটগুলোর চেয়ে ঢের বেশি বলা গেল।
সওয়াল: কার বলুন বা ফলা, মূলরূপ বদলানোর কারণ: ১) অস্পষ্টতা-দূরীকরণ, ২) সৌন্দর্য। র-এর তলায় ু রাখা যায় নি র-এর তলায় শূন্য আছে বলে,—রাখলে বু-এর পানা ঠেকত,—কার তাই উলটে দেওয়া হল, ঘুরিয়ে দেওয়া হল— রু হল। তবে য়-এর বেলায় হল না কেন? য় আগে য় ছিল না, তলায় শূন্য ছিল না, বদলে য ছিল। কাজেই কার তার নিজের আদরায়ই ছিল— যু। পরে যখন যু-এর তলায় শূন্য এনে নতুন বর্ণর জন্ম দেওয়া তখন সেই র-এর সমতুল্য ঘটনাই ঘটল, অর্থাৎ, তলায় শূন্য এল। তবে তো উলটো, ঘোরানো কারই হওয়া উচিত। কিন্তু তা করা হল না। একই ব্যাপার ড়ু ও ঢ়ু-এর ক্ষেত্রয়। কেন? ড-বর্ণ ও ঢ-বর্ণর বহু পরে ড়-বর্ণ ও ঢ়-বর্ণ এল বলে একইভাবে?
ওকালতি, পুরাতনের প্রতি কপোতহস্তমুদ্রা ও বি.দ্র.: বর্তমান রচনা নিদানধর্মী নয়কো (মানে, তলার হ্রস্ব উ-কারের নিজস্ব ঠাম বজায় রাখা উচিত না বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রয় ঠাম বদলানোই ভালো তা বলা হয় নি।),— যা হতে থাকছিল, হয়েছিল, হয়ে আসছিল ও শেষমেষ যা ছিল তা যে নিতান্তই খেয়ালপ্রসূত নয়, সামঞ্জস্য-, প্রতিসাম্য-, স্পষ্টতা- ও নান্দনিকতা-রক্ষার্থেই যে বিবর্তন, তার প্রতি কপোতহস্তমুদ্রা তুলে ধরতে চাওয়া এবং কালে কালে করাল কালের (বর্তমানে অদ্ভুত ফন্ট দেখতে পাওয়া যায়। কিছু যুক্তবর্ণয় পুরোনো কায়দা, কিছু যুক্তবর্ণয় নতুন।) দেখা পাওয়ার দুর্ভাগ্যকে স্পষ্টতার নামে পড়তে চাওয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, কীসের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হওয়া উচিত, কীসের প্রতিই বা নয়, তার ঝাঁকিদর্শন।
Comments
Post a Comment